মাসুদ হোসেন : যথাযোগ্য মর্যাদায় চাঁদপুরে পালিত হয়েছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও জাতীয় শহীদ দিবস। রবিবার (২১ ফেব্রুয়ারি) দিবসটি উপলক্ষে জেলার আট উপজেলার ৮৮টি ইউনিয়নে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সরকারী-বেসরকারী সকল প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ৫২ এর ভাষা শহীদদের স্বরণে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। যুক্ত ছিল বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনও। আর বিভিন্ন আয়োজন বিহীন দিবসটি পালিত হয়েছে সম্পূর্ণ নিরবে।
মাতৃভাষা দিবসের এই দিনে জেলার কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, অন্যান্য বছরের মত বিভিন্ন আয়োজন নিয়ে উদযাপন করতে দেখা যায়নি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও জাতীয় শহীদ দিবস। কারন, বিগত বছরগুলোতে একুশের প্রথম প্রহরে প্রশাসন ও রাজনৈতিক সংগঠনের বাহিরেও বিভিন্ন সংগঠন শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হতো। এমনকি দিবসের ভোর বেলায় দেখা যেতো সড়কে সড়কে প্রভাত ফেরীর সারি সারি দল। শহর কিংবা গ্রামাঞ্চলের স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিশাল প্রভাত ফেরী মানুষের মাঝে এনে দিতো এক অন্যমাত্রা।
প্রশাসন, রাজনৈতিক সংগঠন, বিভিন্ন দপ্তর কিংবা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকেও বেরবকরা হতো বর্ণাঢ্য র্যালী। করোনা মহামারীর ভয়াল ছোবলে এসব আয়োজনকে করে দিয়েছে লন্ডভন্ড। সরকার ঘোষিত স্বাস্থ্য বিধি মেনে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপনের ফলে দিবসটির আমেজ আগের মতো দেখা যায়নি। অন্যদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ মোতাবেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ছাত্র ছাত্রীদের র্যালী বিহীন নিস্তব্ধ ছিলো জেলার গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো।
এছাড়াও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে করা হতো মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান কিংবা বিভিন্ন
প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠান।
অন্যদিকে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকেও করা হতো বর্ণাঢ্য র্যালী, আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন
প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন।
চাঁদপুর সদর উপজেলার মহামায়া হানাফিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ খোরশেদ আলম মোল্লা জানান, আমরা সরকারী নির্দেশনা মোতাবেক এবছর কোন শিক্ষার্থীকে বিদ্যালয়ে আনিনি। শুধুমাত্র আমরা শিক্ষক মন্ডলি আর ম্যানেজিং কমিটির পক্ষ থেকে শহীদদের স্বরণে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ, দোয়া ও মোনাজাতের আয়োজন করা হয়। সরকারি নিবন্ধনকৃত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন “প্রভাত সমাজকল্যাণ সংস্থা” চাঁদপুর শাখার সহ সভাপতি মোঃ জুয়েল হাজী
বলেন, অন্যান্য বছর আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন আয়োজন করেছি।
যেমনটি ভাষা শহীদদের স্বরণে সংগঠনের সদস্য ও এলাকার যুব সমাজের অংশ গ্রহণে বিশাল র্যালী বের করা হতো। শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ, বিনামূল্যে রক্তের গ্রুপ নির্ণয়সহ অনেকগুলো আয়োজন করেছি। এবছর করোনা মহামারীর কারনে সরকারের নির্দেশনা অমান্য করে তা করা হয়নি। শুধুমাত্র স্বাস্থ্যবিধি মেনে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়েছে।
অন্যদিকে কিছু কিছু এলাকায় দিবসটিকে যথাযথ গুরুত্ব না দিয়ে মাতৃভাষা দিবস উদযাপনের নামে চলেছে আনন্দ পার্টি। ২০ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যার পর থেকে মধ্য রাত পর্যন্ত উচ্চ শব্দে স্পিকারে বেজেছে হিন্দি আর রেপ গান। অথচ বাংলা ভাষার জন্য শহীদ হয়েছে অসংখ্য প্রাণ। দিবসটিতে জেলার প্রায় সবকটি বাজারের অসংখ্য দোকানপাটে লাগানো হয়নি জাতীয় পতাকা। যে কয়টিতে লাগানো হয়েছে তার অধিকাংশই বেঠিক। যদিও এগুলো পর্যবেক্ষণের জন্য করা হয়েছে জেলা প্রশাসনের একটি কমিটিও।